চোখে ঝাপসা দেখছিলাম। বিশেষ করে বই বা কাগজ পড়ার সময়। ভাবলাম পাওয়ার বেড়েছে। গেলাম ডাক্তার বাবুর কাছে, চোখের ডাক্তার। দেখে টেখে গম্ভীর মুখে জানালেন, - হুমম, ক্যাটারাক্ট, দু-চোখেই। অপারেশন করে নতুন লেন্স বসাতে হবে।
মনটা খারাপ হয়ে গেল। বয়সটা যে কেন আজকাল এত ঘন ঘন জানান দিয়ে উঠছে কে জানে? ডাক্তার বাবু অভয় দিলেন, - খুবই সামান্য ব্যাপার। মিনিট দশেক লাগবে, টেরই পাবেন না। প্রথমে বাঁ চোখটা করব। দশ দিন পরে ডান চোখ।
এত ঘন ঘন, - আমি একটু উদ্বিগ্ন। এবার একটু যেন বিরক্তই হলেন তরুণ ডাক্তারটি, - এত ভয় পাবার কি আছে? গড়ে গোটা দশেক অপারেশন করি আমি রোজ।
কি আর করা? রাজি হলাম।
বাঁ চোখের অপারেশন হল। দেখলাম সত্যি খুবই সামান্য ব্যাপার। ডাক্তার বাবু গল্প করতে করতে কাজ সেরে ফেললেন। দেখলাম বাঁ চোখে বেশ পরিস্কার দেখছি। সাহস সত্যিই বেড়ে গেল। দশ দিন পর বুক ফুলিয়ে আবার হাজির হলাম ডাক্তার বাবুর ক্লিনিকে।
প্রায় সাত জন রুগী বসে আছেন। আমি আজ ৬
নম্বরে। এখন প্রথম জনের অপারেশন চলছে। অপেক্ষারত একজন দেখলাম বেশ ভয়ে ভয়ে আছেন।
বৃদ্ধ ভদ্রলোক। দেখে মায়া হল। কেন যে এই বয়সে চোখের অপারশন করতে এসেছেন? বাড়ির লোকদেরও
বলিহারী। কি দরকার ছিল এনার অপারেশনের? আর তো মোটে ক’টা দিন! ক’দিনই আর বাঁচবেন?
একটি কমবয়সী নার্স
আমাদের দেখাশোনা করছেন। মাঝে মাঝে নিয়ম মত চোখে ড্রপ দিয়ে যাচ্ছেন। আর ওই বৃদ্ধ
ভদ্রলোক নানা প্রশ্ন করে নার্সটিকে উত্যক্ত করছেন। শেষে নার্সটি একটু বিরক্ত হয়েই
আমাকে দেখিয়ে ভদ্রলোককে বললেন, - কেন ভয় পাচ্ছেন? ওই ওনাকে দেখুন না। দশ দিন আগে
বাঁ চোখে অপারেশন করিয়েছেন। আজ ডান চোখে করাবেন। ওনাকে দেখে কি মনে হচ্ছে
ব্যাপারটা খুব ভয়ের?
ভদ্রলোক শুনে আমার
পাশে এসে বসলেন। এবার আমার দিকে নিক্ষিপ্ত হল সব প্রশ্নবান। ধৈর্য না হারিয়ে
ঠান্ডা মাথায় সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। একটু খারাপই লাগছিল। বৃদ্ধ বয়সে একটু
নার্ভাস হওয়া তো স্বাভাবিক।
কিছুক্ষণ
প্রশ্নোত্তরের পর ভদ্রলোককে একটু যেন নিশ্চিন্ত মনে হল। অবশেষে ডাক এল ওনার। উঠে
দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে নত হয়ে নমস্কার করে সশ্রদ্ধ কন্ঠে বললেন, - সত্যিই খুব ভয়
পেয়েছিলাম জানেন। কিন্তু আপনার মত একজন প্রবীণ বয়ঃজ্যেষ্ঠ্ ব্যক্তির কাছ থেকে
আশ্বাস পেয়ে এখন বেশ সাহস পাচ্ছি।
বেশ বলিষ্ঠ পদক্ষেপে
অপারেশন থিয়েটারের দিকে এগিয়ে গেলেন সেই “বৃদ্ধ” ভদ্রলোক।
নিউ জার্সি – ১
ফেব্রুয়ারী ২০১৬
No comments:
Post a Comment