আমেরিকা; বাংলায় আমরা
বলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অন্যতম ধনাঢ্য দেশ,
প্রাচুর্যের দেশ। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোক এখানে এসে
বসবাস করছেন, এই দেশের নাগরিক হয়েছেন। বস্তুতঃ এই দেশ অভিবাসিক বা ইমিগ্রান্টদেরই
দেশ। এই বিশাল ভূমির আদিবাসীরা আজ প্রান্তিক। তাদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কোণে। তারা নিজের দেশে প্রায় অবাঞ্ছিত। যাই হোক, তাদের নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে।
আধুনিক জীবনযাপনের
আকর্ষণে বা নিজেদের স্বপ্ন সফল করতেই নানা দেশের লোকেরা আসেন এখানে। এখানে
জীবনযাত্রার মান উন্নত। জাগতিক স্বাচ্ছন্দ্যের কোনও অভাব নেই। মধ্যবিত্ত ভারতীয় ও
বাঙালি পরিবারের অনেকেই আজ এই দেশের নাগরিক।
সেই রকমই এক বন্ধুর বাড়িতে
বসে আড্ডা হচ্ছিল। বন্ধুটি বহুদিন আমেরিকাবাসী। সেই দেশেরই
এক দায়িত্বশীল নাগরিক। সম্প্রতি কাজ থেকে অবসর নিয়েছে। বিশাল বাড়ি। সামনে পেছনে
বাগান। বাড়ির সংলগ্ম
তিন খানা গ্যারাজ। নিজের গাড়ি, বন্ধুপত্নী ও বন্ধুকন্যার আরও দুখানা গাড়ি। চারদিকে সচ্ছল
জীবনের ছবি।
সেই আড্ডাতেই উঠে এল এক
অদ্ভূত জনগোষ্ঠীর কাহিনী। এই প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী
এই সমাজ থেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের সরিয়ে রেখেছে। এরা থাকে শহর থেকে দূরে; সম্পূর্ণ
নিজেদের জগতে। এরা আধুনিক জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সযত্নে এড়িয়ে চলে। এদের কথা
শুনেছিলাম বহুদিন আগে। কিন্তু সম্যক কোনও ধারণা ছিলনা।
সম্প্রতি খুব কাছ থেকে
এদেরকে দেখার সুযোগ পেলাম। কাছ থেকে দেখেছি, কিন্তু জেনেছি বলতে পারব না। কারণ তার
জন্য কিছু মেলামেশার দরকার। আর এদের সঙ্গে মেলামেশার কোনও সুযোগই নেই। কারণ এরা
স্বেচ্ছায় নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে।
এই জনগোষ্ঠী অ্যামিশ (Amish) নামে
পরিচিত। এরা এক
বিশেষ খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোক। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট দুই ধর্মীয় গোষ্ঠীর
অত্যাচারে এরা অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় আশ্রয় নেয়। এদের
ঐতিহাসিক পরিচয়ে আর গেলাম না। কারণ সেই জ্ঞান আমি অর্জন করতে পারিনি।
একদিন সুযোগ বুঝে
পৌঁছলাম অ্যামিশদের বসতিতে বা অ্যামিশ ভিলেজে। স্থানীও প্রশাসন সেখানে দেখি বেশ
একটা পর্যটন অফিস খুলে রেখেছে। প্রচুর লোক দেখতে আসে, তাই কিছু অর্থ উপার্জন হয়। এ
ছাড়া কোনও সরকারী অনুদান বা ভর্তুকি অ্যামিশরা নেন না। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
অ্যামিশ ভিলেজের প্রবেশ পথ।
আমাদের সঙ্গে একজন গাইড
দেওয়া হল। মহিলা, নাম স্যালী, হাতে মাইক। প্রায় গোড়ালি অব্দি লম্বা
স্কার্ট ও মাথা ঢাকা। বিবাহিতা অ্যামিশ মহিলারা এরকম পোষাকই পরেন। মহিলা
জন্মসূত্রে একজন অ্যামিশ কিন্তু উনি ব্যক্তিগত কারণে সমাজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কি
কারণ বলতে চাইলেন না। একটু মৃদু হাসলেন শুধু। কিন্তু তা সত্ত্বেও উনি যখন এই
অঞ্চলে আসেন, তখন এখানকার রীতি নীতি মেনে চলেন।
একটা মিনিবাসে বসলাম। বেশ
ছড়ানো অঞ্চল। সুন্দর পাকা রাস্তা। চারিদিকে শস্য ক্ষেত, ছোট ছোট দোকান ও কারখানা। মাঝে মাঝে বেশ সুন্দর গোছানো
বাড়ি। কিছুই অস্বাভাবিক চোখে পড়ল না। স্যালী অর্থাৎ সেই গাইড মহিলা কিছু বৈশিষ্ট্যর
দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
আমাদের গাইডের সঙ্গে
প্রথমেই যেটা চোখে পড়ে
তা হল প্রত্যেক বাড়ির সংলগ্ন একটি গ্যারাজ আছে, যেমনটি থাকে যে কোনও আমেরিকান
বাড়িতে। গ্যারাজে গাড়িও আছে। কিন্তু সে গুলো ঘোড়ার গাড়ি। অশ্বচালিত শকট! বাড়ির
এককোনায় ঘোড়াগুলো বাঁধা। বাড়িগুলোয় কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, নেই কোনও টেলিফোন। এরা
মোবাইলও ব্যবহার করেনা, - আমাদের গাইড জানালেন। তবে তিন চারটে বাড়ির পর একটি করে
ফোন বুথ আছে। খুবই সাধারণ। চারিদিকে টিনের ছাউনি। ছাদও টিনের। বিশেষ দরকার ছাড়া
কেউ ফোন ব্যবহার করেনা।
খুব কৌতূহল হল এদের
বাড়ির ভেতরটা দেখার। একটু ইতস্ততঃ করে বাসনা ব্যক্ত করলাম স্যালীকে। উনি হেসে
বললেন এদের বাড়িতে অপরিচিতদের ঢোকা একেবারেই অসম্ভব। তাই অ্যামিশ অঞ্চলের এক কোণায়
এদের জীবনযাত্রার নমুনাস্বরূপ একটি মডেল রাখা হয়েছে। সেখানে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা
গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। তাঁদের চার মেয়ে বিয়ের পরে শশুরবাড়ির বাসিন্দা। তাদের
অনুমতি নিয়ে এই বাড়িটি ট্যুরিস্টদের দেখানো হয়।
বাড়িটি খুবই সাধারন
ভাবে সাজানো। কিন্তু খুব গোছানো। কিন্তু বাড়ির ভেতরে একটি ফ্রিজ দেখে চমকে উঠলাম।
সে কি? এই তো দিব্যি ফ্রিজ আছে দেখছি, তবে না বললেন এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই? একটি
হাসলেন স্যালী, কাছে ডেকে নিয়ে দেখালেন যে সত্যিই নেই। এই প্রাচীন ফ্রিজটি কেরোসিনে
চলে। একটি ওয়াশিং মেশিনও আছে। সেটিও হাতল ঘুরিয়ে চালাতে হয়। ছাদ থেকে যে আলো ঝুলছে
বা ঘরের কোনায় যে ল্যাম্পস্ট্যান্ড তাতেও মোমবাতি লাগানো। রান্নার উনুনও আছে, কয়লা বা কেরোসিনে চলে। গ্যাসের লাইন
নেই। নেই জলের লাইনও। টিউব ওয়েল আছে সব বাড়িতে।
অ্যামিশের সংসার।
কেরোসিনে চলে ফ্রিজ। হাতল ঘুরিয়ে ওয়াশিং মেশিন।
আমাদের আগেই সাবধান করে
দেওয়া হয়েছিল যেন আমরা খুব কাছে গিয়ে কারও ছবি তোলার চেষ্টা না করি। তবে দূর থেকে
তোলা যেতে পারে। কোন অ্যামিশ পুরুষ বা মহিলা ক্যামেরার দিকে তাকাবে না কখনও। খুবই
পরিতাপের বিষয়, খুব একটা ছবি তাই তোলা গেল না।
প্রত্যেক বাড়ির সংলগ্ন
একটি আস্তাবল। খুব যত্ন সহকারে অশ্ব পরিচর্যা এদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য
অঙ্গ। এরা মোট বইতে, গাড়ি টানতে, এমন কি চাষের কাজেও ঘোড়া ব্যবহার করে। প্রত্যেকটি
পরিবারেই পাঁচ ছটি করে ঘোড়া আছে। ঘোড়ার যত্নের জন্য আস্তাবলে এলাহি ব্যবস্থা।
আস্তাবল চাষের ঘোড়া
সব কিছুই কি রকম যেন অবাস্তব
মনে হচ্ছিল। বাইরের জগৎ
থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন যাপন কি সম্ভব? বিশেষ করে এই
আধুনিক যুগে। ধরে নিলাম এদের
খাদ্য সামগ্রী এরা নিজেরাই উৎপাদন করে, কিন্তু স্কুল কলেজে যায় যখন?
একগাল হাসলেন স্যালী। বললেন, - একটু
ধৈর্য ধরে শোনো, সব বলছি। ঠিক প্রশ্নই করেছ। একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা তো যায় না। একটু আধটু তো
যোগাযোগ তো রাখতেই হয়। এই যে বসতি দেখছো, এ ছাড়াও কিন্তু
অন্যান্য জায়গায়ও আছে অ্যামিশদের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে গেলে তো বেরোতেই হয় নিজেদের
ডেরা থেকে। আর ঘোড়ার গাড়ি চড়ে কত দূর আর যাওয়া যায়। তাই এদের ট্রেনে বা বাসে চাপতেই হয়। গাড়িও চড়ে যদি দরকার
হয়, তবে এরা গাড়ি চালায় না কখনও। আর স্কুল কলেজের কথা বলছ? এদের নিজস্ব স্কুল আছে।
৬ বছর বয়সে এরা স্কুলে ঢোকে। এদের শেখানো হয় ইংরিজি, কিছু ইতিহাস, ধর্ম ও বিভিন্ন
জীবিকা; যেমন কারিগরী, কিছু কাঠের বা লোহার কাজ, সেলাই ইত্যাদি। পড়াশোনা শেষ হয়
অষ্টম শ্রেণী (এইটথ স্ট্যান্ডার্ড) শেষ হলে। কলেজ শিক্ষার চলনই নেই। অ্যামিশ সমাজে
এর বেশি পড়াশোনার দরকার পড়েনা। ১৪ বছর বয়সে লেখাপড়া শেষ করে যে যার জীবিকা শুরু
করে এই সমাজের মধ্যেই। স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব মোটামুটি মেয়েরাই পালন করে। স্কুলে
মানবিকতা, সরল জীবন যাপন, সহমর্মিতা ইত্যাদির ওপর খুব জোর দেওয়া হয়।
ক্লাস রুম
পরিবারের গাড়ি খোলা
গাড়ি; অবিবাহিতরা ব্যবহার করে।
প্রায় ঘন্টা খানেক
ঘোরার পর হঠাৎ মনে হল, এত ধর্মনিষ্ঠ জীবন যাপন এদের, কিন্তু কোনও গির্জা বা চার্চ
তো চোখে পড়ল না। এবার একটু সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকালেন স্যালি, - বাঃ তোমার তো বেশ
ভাল নজর দেখছি। ঠিকই ধরেছ। এখানে কোনও চার্চ নেই। এরা নিয়ম করে এক সপ্তাহ অন্তর
কারও বাড়িতে জমায়েত হয় প্রার্থনার জন্য। সেখানেই সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
আরও প্রশ্ন জাগছিল মনে।
এই যে এই অঞ্চলে যে চওড়া রাস্তা বা যেই বিস্তৃত জমিতে এদের চাষবাস, তাতে তো
সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, - বললেন স্যালি। দিতে হয় বৈকি। দেয়ও এরা। দেশের বা রাজ্যের যা আইন তা
অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কিন্তু সরকার থেকে কোনও সুবিধা এর নেয়না। কোনও সোশাল
সিকিউরিটি বেনিফিট বা সরকারি অনুদানও নেয়না।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষেরই
লম্বা দাড়ি গোঁফ, - বিবাহিত পুরুষদের চিহ্ন। অবিবাহিত পুরুষদের
দাড়ি গোঁফ কামানো। বিবাহিতা মহিলাদের মাথা ঢাকা, কুমারীদের মাথা উন্মুক্ত। পথে
একটি অ্যামিশ দোকান চোখে পড়ল। সেখানে বাস থামালেন স্যালী। ভয়ে ভয়ে কিছু ছবিও তুলে
ফেললাম। নানা রকম পন্য সাজানো। সবই হাতে তৈরি। কৃষিকাজে কোন রাসায়নিক এরা ব্যবহার
করেনা। তাই বাইরের জগতে এদের কৃষিজাত দ্রব্যের চাহিদা বেশ। নিজেদের সমাজের চাহিদা
মিটিয়ে কিছু বাচলে সেটা বাইরের বিক্রি করতে শুরু করেছে ইদানীং। তাতে একটু যোগাযোগ
বাড়ছে বাইরের জগতের সঙ্গে। ফলস্বরূপ একটু আধটু ফোনের ব্যবহার চালু হয়েছে। ব্যবসার খাতিরে মোবাইল ফোন ও ই-মেলেরও ব্যবহার শুরু
হয়েছে। কিন্তু এখন অব্দি নিজেদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি
একেবারেই।
উইন্ডমিল
মাম, লুক, আ উইন্ডমিল!
পেছনে বসা একটি বাচ্চার চিৎকার শুনে বাইরে তাকালাম। তাই তো! এটা তো এতক্ষণ খেয়াল
করিনি। আসলে রাস্তার দু-দিকেই নানা রকম বিস্ময় ছড়িয়ে, বাঁদিকে তাকালে ডান দিকের
কিছুই দেখা হয়না। বাচ্চাটি ঠিকই দেখেছে। শস্যক্ষেতের ভেতর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
আছে একটি উইন্ডমিল। স্যালীর দিকে তাকালাম, উনি দেখি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
মাইক হাতে নিয়ে আবার বললেন,- নিজেদের চাহিদা মেটাতে এরা ছোটখাট কারখানা চালায়,
লোহার, কাঠ, চাষবাসের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। কাজের সুবিধের জন্য মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ
অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সেই বিদ্যুৎ এরা নিজেরাই তৈরি করে নেয়। উইন্ডমিলের যন্ত্রপাতিও
এরা নিজেরাই তৈরি করে।
আরও একটি তথ্য জানালেন
স্যালী। এদেশে আজকাল বিকল্প শক্তি বা অল্টারনেটিভ এনার্জির চাহিদা হয়েছে। অনেক
বাড়ির ছাদেই আজকাল দেখা যায় বিভিন্ন মাপের সৌর প্যানেল। বায়ু শক্তি বা উইন্ড
এনার্জি সম্বন্ধেও বাড়ছে লোকের কৌতূহল। এই ব্যাপারে অ্যামিশদের সাফল্য অনেকেরই
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই এদের তৈরি উইন্ডমিলেরও একটা বাজার তৈরি হয়েছে।
অ্যামিশ দোকানের সামনে কিছু পর্যটক
দোকানদার ও তার মেয়ে
সবই তো বুঝলাম। কিন্তু
একটা প্রশ্ন তো রয়েই গেল! অসুখ বিসুখ হলে কি করে এরা? প্রশিক্ষিত ডাক্তার তো নেই
এদের! স্যালীর দেখলাম ধৈর্য আছে। প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন হাসিমুখে। বললেন,
এদের জীবন যাত্রা এমন যে কোনও বড় অসুখ এদের সাধারণতঃ হয় না। কোনও নেশাও নেই।
মদ্যপান নিষিদ্ধ। ধূমপান নিষিদ্ধ নয় কিন্তু তামাক নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হয়। সরল
টেনশন মুক্ত জীবন। তবে ছোট খাট অসুখ তো হতেই পারে। তার জন্যে নানা রকম ভেষজ
চিকিৎসার প্রচলন আছে। যদি নেহাৎ কোন বড় অসুখের খপ্পরে পড়ে কেউ তবে সমাজের অনুমতি
নিয়ে বাইরের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যায়। খরচটা সমাজ থেকেই দেওয়া হয়।
অবশেষে আমাদের মিনিবাস
ফিরে এল। সফর শেষ হল আমাদের। কেমন যেন অবাস্তব মনে হচ্ছিল সব কিছু। যখন সারা
পৃথিবী প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে, তখন এই জনগোষ্ঠী
আঁকড়ে ধরে আছে অষ্টাদশ শতাব্দীকে। ক’দিন থাকবে এই সমাজ কে জানে? অনেক কথাই বলেননি
স্যালী। অনেকেই হয়তো বেড়িয়ে এসেছে এই সমাজ থেকে। যেমন নিজে বেড়িয়ে এসেছেন স্যালী।
এখন নাকি আমেরিকায় এদের সংখ্যা প্রায় ২,৫০,০০০-এর মত। কিন্তু এরা নাকি বাড়ছে দ্রুত
গতিতে। কিসের মোহে কে জানে? এদের পরিবার খুব বড় হয়। প্রত্যেক পরিবারে সাত আট জন
সদস্য। কাজিনদের মধ্যে বিবাহ সমাজে স্বীকৃত। এত ছোট সমাজ। এদের সঙ্গে মাস খানেক
থাকতে পারলে খুব ভাল হত। কিন্তু তা সম্ভব নয়।
ফেরার পথে হঠাৎ মনে পড়ে
গেল সেই কবির ক’টি কথা, যাঁকে ছাড়া আমাদের জীবন অন্ধকার -
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র
কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে
নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন
পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নীবারধান্যের মুষ্টি, বল্কলবসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে
নিত্য আলোচন
মহাতত্ত্বগুলি।
পাষাণপিঞ্জরে তব
নাহি চাহি নিরাপদে
রাজভোগ নব--
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার,
বক্ষে ফিরে পেতে চাই
শক্তি আপনার,
পরানে স্পর্শিতে চাই
ছিঁড়িয়া বন্ধন
অনন্ত এ জগতের
হৃদয়স্পন্দন...
************