২০১৩ ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে শেষবারের মত অফিস গিয়েছিলাম। তারপর থেকে অবসর জীবনের শুরু। বেশ লাগছে। হাতে বেশ অনেকটা সময়। ইচ্ছে মত বই পড়ে, টিভি দেখে, শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছি। তবে সেই যে বলে না, যে অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। মাঝে মাঝে অসংলগ্ন কিছু চিন্তা মাথায় আসে। কাউকে বলাও যায় না। লোকে ভাববে চুপচাপ ঘরে বসে থেকে মাথাটাই বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম কাউকে বিরক্ত না করে যা মাথায় আসে চুপচাপ লিখে ফেলাই ভাল। সময় মত নিজেই পড়ব। অনেকটা নিজের সঙ্গে আড্ডা মারার মত। পাগলের প্রলাপ? বোধহয় তাই!
Saturday 12 September 2020
প্রলাপ: নানা রঙের দিনগুলি
একটি সুপাত্র
একটি সুদর্শন যুবক। পেটানো, মেদহীন চেহারা। তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। কলেজ জীবনে খেলাধূলো করেছে প্রচুর। নানা বিষয়ে পড়াশোনা ও জ্ঞান। বাংলা, হিন্দী, ইংরিজি সব ভাষাতেই সচ্ছন্দ। বয়সটা ঠিক জানিনা। পঁচিশ থেকে এই একত্রিশ বত্রিশের মধ্যে। এই ছেলের কি কোনও পাত্রী জুটবেনা? বা একটি সুন্দরী, শিক্ষিতা ও বুদ্ধিমতী বান্ধবী?
আপনারা বলবেন নিশ্চয়ই জুটবে। কিন্তু জোটেনি।
ছেলেটি কিন্তু বাংলার গর্ব। পেশায় একজন গোয়েন্দা। মাঝে মাঝে পিস্টল বা রিভলভার
ব্যবহার করে, কিন্তু আসল অস্ত্র হল মগজাস্ত্র।
প্রদোষ মিত্র। বা আমাদের সবার প্রিয় ফেলুদা। সব
ভাল কিন্তু কেমন যেন প্রেমহীন জীবন। এত লোকের সঙ্গে আলাপ, কত মক্কেল, প্রচুর
অনুরাগী, কিন্তু কোথাও কোনও নায়িকার দেখা পাওয়া গেলনা। কিন্তু ফেলুদার
পূর্বসুরীদের দেখুন। কিরিটী রায়ের একটি
সুন্দরী স্ত্রী ছিল, - কৃষ্ণা। সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ তো আত্মপ্রকাশের কিছু পরেই অর্থমনর্থম
রহস্য সমাধান করে সত্যবতীর সন্ধান পেয়ে গেলেন। ব্যোমকেশ বাবু অবশ্য বিশেষ ভাগ্যবান।
এক চিরকুমার বন্ধু আজীবন বন্ধু ও বন্ধুপত্নীর সংসারের দেখশোনা করে জীবন কাটিয়ে
দিলেন।
কত লোকের সঙ্গে আলাপ ফেলুদার। কত বড় বড় শিল্পপতি,
আইনজীবি, বিশাল জমিদার। কারও বাড়িতেই একটি সুলক্ষণা পাত্রী পাওয়া গেলনা। শুধু
নায়িকা কেন? ফেলুদার জীবনে কোনও মাসীমারও আবির্ভাব হয়নি। বেশির ভাগ মক্কেল হয়
অবিবাহিত কিংবা বিপত্নীক। যাঁরা বিপত্নীক, তাদের সবারই পুত্র সন্তান। অবিবাহিতদের
ভাইপো বা ভাগ্নে। আশ্চর্য! কি কপাল! এত মক্কেল, পুলিস অফিসারদের সঙ্গে আলাপ,
কিন্তু কারও বাড়িতেই তোপসের একজন বৌদি পাওয়া গেলনা। এই যে সিধু জ্যাঠা? তাঁর
পরিচিত একটি সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েও কি ছিলনা? লালমোহন বাবুও বা কেমন? সাহিত্যিক মানুষ, - এই
ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর তো নিতেই পারতেন।।
অনেকে হয়তো বলবেন, - বিয়ে হয়নি তো কি
হয়েছে? শার্লক হোমসেরও তো বিয়ে হয়নি। সে না হোক, ওদের সঙ্গে আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতি
মেলেনা। অবশ্য শুধু ফেলুদা কেন? অনেক বাঙালি হিরোই অবিবাহিত থেকে
গেছেন। যেমন জয়ন্ত-মাণিক, বিমল-কুমার, দীপক চ্যাটার্জি-রতন লাল ইত্যাদি। তার আগে শ্রী
পাঁচকড়ি দে দেবেন্দ্র বিজয় ও অরিন্দম বাবুর কথা বলেছিলেন। কিন্তু এঁদের সম্বন্ধে আমি
কিছুই জানিনা। সবাইকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানিয়েই বলছি, এঁদের মধ্যে শ্রী প্রদোষ মিত্রই
সবচেয়ে সুপাত্র হিসেবে গন্য হবেন। ফেলুদার সত্যিই একটা বিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল।
ফেলুদার অভিভাবক বেঁচে থাকলে সবাই মিলে দাবী জানাতাম,
- ফেলুদার বিয়ে দিন। এখন তো আর তা সম্ভব নয়।
এই একটা বাসনা অপূর্ণই থেকে গেল।
কলকাতা ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০