Wednesday 2 July 2014

পেরুবাসিনী


এখন আমরা আমেরিকায়, ছেলে মেয়ে, জামাই, নাত্নীর সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছি। আপাততঃ আছি মেয়ের বাড়ি। মেয়ে জামাই দু-জনেই চাকরী করে একমাত্র শিশু কন্যার দেখা শোনার জন্য এক মহিলাকে নিযুক্ত করা হয়েছে এখানকার ভাষায় ন্যানী (nanny) এর বাঙলা প্রতিশব্দ কি জানার জন্য গুগল ট্রান্সলেশনের শরণাপন্ন হয়েছিলাম গুগল বলছেআয়া আমার পছন্দ হয়নি কারণ আমরা আয়া বলতে সচরাচর যা বুঝি, এই মহিলা তা নয় এর স্বামী একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ নেওয়ার্ক বিমান বন্দরে বেশ ভাল চাকরি করেন আমার সঙ্গে আলাপও হয়েছে মহিলাও শিক্ষিতা, নাম সোফিয়া এরা পেরু থেকে ভাগ্যান্বেষণে আমেরিকা এসেছেন বছর দশেক আগে এদের ছেলে, একমাত্র সন্তানের বয়স ২৫ সে বান্ধবী নিয়ে আলাদা থাকে সোফিয়ার বয়স বছর পঞ্চাশেক,খুব বাচ্চা ভালবাসে; তাই এই ধরণের কাজ করে আনন্দ পায় সমস্যা একটাই, ইংরিজিটা খুব একটা ঝরঝরে নয় তাতে খুব একটা অসুবিধে হয় না সোফিয়ার স্বামী অবশ্য বেশ আমেরিকান উচ্চারণে ইংরিজি বলেন

সোফিয়া প্রত্যেক দিন বাড়ি থেকে লাঞ্চ নিয়ে আসে নিজের মনে সময় মত খেয়ে নেয় ছোট্ট একটা টিফিন বাক্স থেকে

প্রত্যেক সকালে আমার স্ত্রী এটা সেটা রান্না করে রাখেন মেয়ে জামাই এর জন্য শুক্রবার অফিস করে ছেলেও চলে আসে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, হৈ চৈ হয়

দৈনন্দিন রান্না শেষ করে স্ত্রী প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন সোফিয়াকে, - একটু টেস্ট করে দেখবে না কি? সোফিয়া রাজি হত না, - নো নো ইন্ডিয়ান ফুড ভেরি স্পাইসি অ্যান্ড হট ওরা নাকি একবার সপরিবারে কোনও এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয় গিয়েছিল কিন্তু ভাল লাগেনি অত্যাধিক মশলা ঝালের জন্য

একদিন এক বাংলাদেশি দোকান থেকে বিরাট বড় এক কাতলা মাছ নিয়ে এল জামাই ঠিক হল দই-মাছ হবে আর সঙ্গে হাল্কা কিছু একটা পরের দিন গিন্নী দই-মাছ আর আলু-ফুলকপি দিয়ে খুব হাল্কা ছানার ডালনা বানালেন সেদিন হঠাৎ সোফিয়ার কি হল কে জানে, বলে উঠল, - উমমমম নাইস স্মেল। গিন্নী বললেন, - একটু চেখে দেখবে না কি? সোফিয়া আপত্তি করল না। একটা প্লেটে ভাত আর দুটো বাটিতে দু-পদ সাজিয়ে দেওয়া হল। আর বুঝিয়ে দেওয়া হল কি করে খেতে হবে। অনেকক্ষণ তারিয়ে তারিয়ে খেল সোফিয়া। এও বলল, ভেরি নাইস, নট সো স্পাইসি।

খেয়ে দেয়ে একটা ছোট্ট ডায়রী আর কলম বের করল সোফিয়া। গিন্নী ভাবলেন বোধহয় রন্ধন প্রনালী জানতে চাইছে। না তা নয়, সোফিয়া পদ দুটোর নাম জানতে চাইল। বলল, - আস্তে আস্তে বল আমি লিখে নিচ্ছিআমার হাজবেন্ড খুব ভোজন রসিক, ওকে গিয়ে বলব। গিন্নী ধীরে ধীরে নাম জানালেন, - ছা-না-র  ডা-ল-না আর দ-ই  মা-ছ। সোফিয়া লিখে নিয়ে আবার বলল , - ভেরি নাইস। গিন্নী খুব খুশি বাঙালী রান্নার প্রশংসা শুনে।

দিন সাতেক পর এক দিন সোফিয়া এল যথারীতি কণ্ঠে হতাশা! জানালো, শনিবার রাতে স্বামীকে নিয়ে গিয়েছিল, সেই অঞ্চলের এক বিখ্যাত ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ওয়েটার মেনু কার্ড দিতেই বলল আমাদের মেনুর দরকার নেই আমরা শুধু দুটো আইটেম নেব, উইথ রাইস কি আইটেম? না, ‘শানা দালনাএন্ডদওয়ী মাশ তাজ্জব ব্যাপার! ওয়েটারটা বুঝতেই পারছে না আমরা কি চাইছি দে ডিড নট নো হোয়াট উই আরে টকিং আবাউট কি ধরণের ইন্ডিয়ান রেস্তোরান্ত বল তো? আমাদের বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করল সোফিয়া

আমি বোঝাতে চাইলাম যে সচরাচর ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয় যা পাওয়া যায়, তা এক বিশেষ অঞ্চলের রান্না আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন রন্ধন প্রনালী! সোফিয়া সন্তুষ্ট হল না আমার জবাবে ওর সেই একই মন্তব্য ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ শুড সার্ভ ইন্ডিয়ান ফুড, অল কাইন্ড

হায় রে! আমাদের এই বিরাট দেশের বিশাল বৈচিত্র্য, কি করে বোঝাই এই পেরুবাসিনীকে?

No comments:

Post a Comment