-
কি করছিস?
-
আরে আয়, অফিস থেকে সোজা না কি? টাই-টাও খুলিস নি এখনও
-
ও হ্যাঁ তাই তো, খেয়ালই করি নি, দাঁড়া খুলি আগে; - জয় টাই-এর নটে হাত দেয়- থাক না, বেশ ভালই তো লাগছে – এ কি খুলে ফেললি?
- তুই কি করছিস, একা একা বাড়িতে? গীতা মাসী কোথায়?
- মা’র কলেজের এক বন্ধুর মেয়ের আশীর্বাদ আজকে, সেখানে গেছে, ফিরতে একটু দেরি হবে
- আর মেসোমশাই?
- বাবা গত কাল চেন্নাই গেছে, কাজে। পরশু ফিরবে। অফিস থেকে সোজা আসছিস, চা খাবি তো?
- কে বানাবে? তুই?
-
হ্যাঁ, এক কাপ চা বানাতে কি? এক্ষুনি করে দিচ্ছি; - নীলা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়
-
না বোস তো, এখন চা বানাতে হবে না। আমি এলাম একটু আড্ডা মারতে আর উনি চললেন চা বানাতে- অফিস থেকে সোজা এসেছিস আড্ডা মারতে, আমার সঙ্গে। বাবা, তোর সব ইয়ার দোস্তরা কোথায় গেল?
- ওরা সব সন্ধ্যে বেলা বাড়ি আসবে বলেছে, তাই ভাবলাম তোর সঙ্গে একটু দেখা করে যাই। কাল সকালে দিল্লী ফিরছি।
- সে কি রে? এখানকার কাজ হয়ে গেল?
- হ্যাঁ রে
- ছুটী নে ক’দিন
- না রে। বসের সঙ্গে এসেছি তো, সঙ্গেই ফিরতে হবে
- ক’টায় ট্রেন তোর?
- কাল ভোরের ফ্লাইট
- ও তাই তো! – হেসে ফেলে নীলা – তুই তো এখন হাই ফ্লাইং এক্সিকিউটিভ!
- দুর দুর – মোটে তো এক বছর হল সবে, বসের সঙ্গে এসেছি বলেই; যাক গে, বাজে কথা রাখ। তুই কবে ফিরছিস?
- আজ সোমবার, আমি পরের মঙ্গলবার রওনা হচ্ছি, বুধবার পৌঁছব
- এত তাড়াতাড়ি কলেজ খুলে গেল
- না কলেজ খুলতে দেরি আছে; আসলে ফাইনাল ইয়ার তো, কয়েকটা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করতে হবে। নইলে পরে প্রেশার পড়বে খুব।
- এর পর কি করবি?
- ভাবছিলাম তো মাস্টার্স করব, দেখি ...
- গীতা মাসীর তো অন্য প্ল্যান, মা বলেছে – এক গাল হাসে জয়
- তাই? সত্যিই ভীষণ বাড়াবাড়ি শুরু করেছে মা। বাবা কিন্তু আমার দলে
- সব ঘ্যামা ঘ্যামা সম্বন্ধ আসছে শুনলাম। উচ্চ শিক্ষিত, পিএইচডি, রোজগেরে, সুদর্শন...
- ঠিকই শুনেছিস, কিন্তু সবাই বিদেশে থাকে জানিস তো? আমেরিকা আর ক্যানাডা; এক জন আবার স্কটল্যান্ডে ডাক্তার
- ও বাবা এ তো সবই বিরাট সুপাত্র রে, রাজি হয়ে যা
- চুপ কর তো, আমি মরছি ফাইনালের টেনশনে আর উনি এলেন ঘটকালি করতে
- আমাকে কিন্তু একটু আগে থাকতে জানাস, আমি যে করেই হোক, ছুটি নিয়ে আসবই
- আমি মোটেই বিদেশে যাব না; আমার অনেক প্ল্যান আছে।
- কি রকম?
- মাস্টার্স করব, পিএইচডি করব, পড়াব; ডঃ নীলা সেনের ক্লাস আজ, ছাত্ররা সব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে।।
- সে টা তো বিয়ের পরেও করতে পারিস…
- এই দেখ জয়, আমার কিন্তু এই টপিকটা ভাল লাগছে না
- ঠিক আছে, আমি একটা পরামর্শ নিতে তোর কাছে এসেছি।
- আমার কাছে? পরামর্শ? প্রেমে টেমে পড়েছিস না কি?
- অনেকটা সে রকমই – একটু থেমে থেমে বলে জয়…
- সে কি রে? - সোফার ওপরে প্রায় লাফিয়ে ওঠে নীলা – একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে, জয় বাবু প্রেম করছে! সুর্য কি পশ্চিম দিকে উঠল?
- এ রকম বলিস না, - জয় একটু দমে গেল – একটা প্রবলেমে পড়ে তোর কাছে এসেছি
- প্রবলেম? এতে আবার প্রবলেম কি আছে?
- আসলে … মানে কি করে যে তোকে বোঝাই, জানিস তো আমাকে, এ সব ব্যাপারে আমি বেশ হাঁদা, মেয়েদের সঙ্গে ঠিক গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।
- তা তো দেখতেই পাচ্ছি…
- আরে তোর কথা আলাদা; তুই তো সেই ছোট্ট বয়স থেকে আমার খেলার সাথী, বন্ধু। তোর জন্মের সময় আমার বয়স ছিল এগারো মাস।
- আচ্ছা ঠিক আছে। সিরিয়াস। বল কি হয়েছে?
- কাউকে বলবি না তো?
- আরে বাবা না। প্রমিস
- আমার না এক জন কে ভাল লাগতে শুরু করেছে
- বেশ তো। এর মধ্যে প্রবলেম কোথায়?
- আসলে …।
- মীরা মাসীকে বলতে হবে। নো প্রবলেম। আমি কালই বিকেলে গিয়ে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করব। তুই আমাকে সব ডিটেলস গুলো দে…
- আরে নারে বাবা। এত সহজ নয়
- কেন?
- আমি তো মেয়েটা কি চায় তাই বুঝতে পারছি না
- তো জিজ্ঞেস কর… গিয়ে সোজা বল, এর মধ্যে সঙ্কোচের কি আছে?
- অনেক বার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সামনে দাঁড়ালেই সব কি রকম গন্ডগোল হয়ে যায়…
- হুমমমম , তুই শুধু হাঁদাই নোস, রাম হাঁদা…মেয়েটা কি দিল্লীরই মেয়ে? বাঙালী?
- অ্যাই, নো প্রশ্ন।
- আমায়ও বলবি না… একটু রাগ দেখায় নীলা
- বলব। ব্যাপারটা যদি দাঁড়িয়ে যায়, তবে তোকে সব চেয়ে আগে বলব। কথা দিলাম।
- ঠিক আছে। একটা আইডিয়া আসছে মাথায়
- কি?
- মেয়েটার ঠিকানা জানিস?
- হ্যাঁ জানি
- চিঠি লেখ
- চিঠি? কি লিখব?
- সোজাসুজি লেখ যে, “তুমি এই চিঠি পড়ে খুব অবাক হবে। কিন্তু আমি অনেক দিন থেকে তোমাকে একটা কথা জানাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু সঙ্কোচ করে জানাতে পারছি না। তোমাকে না আমার খুব ভাল লাগে। আমি শুধু এই টুকুই জানতে চাইছিলাম যে তুমি আমার সম্বন্ধে কি ভাবো।” --…ব্যস। এর বেশি কিছু লেখার দরকার নেই। আর বেশি ইনিয়ে বিনিয়ে লিখতে যাস না। তুই পারবিও না।
- লিখব?
- হ্যাঁ লেখ। দেরি করিস না। দেরি করলে পরে পস্তাবি।
- যদি রেগে যায়?
- না রে রাগবেনা। আমি গ্যারান্টি দিতে পারি। তুই তো একটা ভদ্র ছেলে। মেয়েটা রাজি হবে কি না আমি জানি না। তবে ফ্ল্যাটার্ড হবে আমি হলফ করে বলতে পারি।
- লিখব বলছিস?
- হ্যাঁ, তবে বাংলায় লিখবি না ইংরিজিতে সেটা তোকে ঠিক করতে হবে। আমাকে তো আসল খবর কিছুই দিলি না। ঠিক আছে। কথা দিয়েছিস, সব চেয়ে আগে আমায় জানাবি।
- একদম পাক্কা। আজ চলি তবে।
- আয়। ই-মেল দিস। আর বেস্ট অফ লাক – এক গাল হাসে নীলা
- থ্যাংক ইউ --- একটু হেসে বেড়িয়ে যায় জয়
নীলা জানলার পর্দা সরিয়ে অনেকক্ষণ দেখে জয়কে। গট গট করে
এগিয়ে চলেছে। এক বারও পেছন ফিরে তাকালো না। হঠাৎ বুকটা ভারি হয়ে আসে নীলার। গলার
ভেতরে কি যেন একটা জমাট বেঁধে উঠছে। অকৃতজ্ঞ, সেলফিশ একটা। মনটা খারাপই লাগছে। আর কি
দেখা হবে জয়ের সঙ্গে?
তাড়াতাড়ি পা চালায় জয়। নীলার বাড়ি থেকে
নিজের বাড়ি দশ মিনিটের হাঁটা পথ। রাস্তায় একটা
স্টেশনারি দোকান থেকে এক বাহারি রাইটিং প্যাড আর খাম কিনল। নীলাকে মিথ্যে কথা বলেছে,
ইয়ার দোস্ত কেউ আসবে না বাড়িতে। এখন বাড়ি
পৌঁছে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে চিঠি লিখতে বসবে জয়। জীবনের প্রথম প্রেমপত্র। লিখে
খামে ভরে রাখবে রাত্রে শুতে যাবার আগে। কাল সকালেই এয়ারপোর্টের পোস্ট অফিসে পোস্ট করবে।
কাল মঙ্গলবার। বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র; তিন দিনেই পৌঁছে যাবে চিঠি। এই ভাল। ই-মেলের থেকে হাতে লেখা চিঠি অনেক বেশি আন্তরিক।
নীলা হস্টেলে পৌঁছবে আগামী বুধবার। গিয়েই পেয়ে যাবে জয়ের চিঠি।
ভয় নেই। রেগে যাবে না। কথা দিয়েছে নীলা।
নিউ জার্সি- ৪ অগাস্ট ২০১৩
No comments:
Post a Comment