Saturday 17 August 2013

পেঁয়াজ মাহাত্ম্য


পেঁয়াজ দুর্মূল্য। ষাট থেকে সত্তর টাকা কিলো চলছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুজোর আগে এক’শ টাকায় গিয়ে পৌঁছবে। বাড়ি বাড়ি কম পেঁয়াজে বা বিনা পেঁয়াজে রান্না হচ্ছে। মোটামুটি সাত্ত্বিক আহার। খুবই সুসংবাদ। বাঙালী আজীবন বদহজমের শিকার। পেঁয়াজ পেট গরম করে, সে কথা শিশুরা অব্দি জানে। সরকার যদি রসুনের দামটা আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন তবে তো সোনায় সোহাগা। পেঁয়াজ রসুন ছাড়া হাল্কা স্বাস্থ্যসম্মত আহার করে শরীর ও মন বেশ চনমনে হয়ে উঠবে। বাঙালী আবার দেশ গড়ার কাজে ঝাপিয়ে পড়বে। এটি একটি নিঃশব্দ বিপ্লব। প্রত্যেক বিপ্লবে কিছু লোককে চরম আত্মত্যাগ করতে হয়। সাধারণ মানুষের জীবনেও কিছু কিছু পরিবর্তন আসে।

বাঙালীর আদি ও অকৃত্তিম জলখাবার হল তেলেভাজা। অফিস থেকে ফিরে এক কাপ গরম চা আর এক বাটি মুড়ির সঙ্গে গরম গরম বেগুনি আর পেঁয়াজি; আঃ। কিংবা কোনও ছুটির দিনে বৃষ্টির মাঝে দফায় দফায় চা আর তেলে ভাজা  সমেত আড্ডা! তার কোনও তুলনা আছে? সেই ঐতিহ্যময় তেলেভাজা শিল্প এখন চরম সঙ্কটে। পাড়ায় পাড়ায় তেলেভাজা দোকানের সামনে নোটিস, - পেঁয়াজি নাই। কি আর করা? ইংরিজিতে খুব সুন্দর একটা কথা চালু আছে, - কোল্যাটারেল ড্যামেজ। কোনও বৃহৎ কাজে ছোট খাট ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। আর তা ছাড়া তেলেভাজার সেই গৌরব তো অনেক আগেই অস্তমিতঃ। বাঙালীর প্রিয় স্ট্রীট-ফুড এখন তেলে ভাজা নয়। সেই স্থান অনেকদিন আগেই অধিকার করেছে, রোল। অফিসের টিফিন টাইমে বা অফিস  থেকে ফেরার পথে বাবু বিবিরা গোগ্রাসে এগ-চিকেন, এগ-মাটনের স্বাদ উপভোগ করেন। অবশ্য তাতেও পেঁয়াজের একটা ভূমিকা আছে, কিন্তু তা নিতান্তই গৌণ। আর রোল শিল্পও তার গুরুত্ব হারাচ্ছে শুনেছি। বিশ্বায়নের হাত ধরে পৌঁছে গেছে  পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি। সেই সব সুখাদ্যে পেঁয়াজের কতটা অবদান সেটা আমার জানা নেই।

আর সত্যি কথা বলতে কি পেঁয়াজ কিছু অনর্থেরও মূলও বটে। মনে আছে সেই নিষ্পাপ ভাল ছেলেটির কথা, যে দোষের মধ্যে একটু পেঁয়াজ খেত, তাও সব সময় নয়, যখন একটু...ইত্যাদি; কি ভয়ানক পরিনাম হয়েছিল সেই ছেলের। এখন  নিশ্চিন্ত, - পেঁয়াজ খাবার ভয় আর নেই। পাবে কোথায়?

আর স্বাস্থ্যের দিকটাও ভাবতে হবে। বড় বড় ডাক্তাররা সবাই একযোগে বলছেন যে তেল এবং তেলে ভাজা (ইংরিজিতে যাকে ডীপ ফ্রাই বলা হয়) বিষবৎ বর্জনীয়। পেঁয়াজ তো ভ্যানিশ হল, এখন যদি সরকার এবং বেওসায়িরা বেগুনও ভ্যানিশ করে দিতে পারেন তবে তা যথার্থ দেশ সেবা হবে।

কিন্ত বাঙালী কি এত সহজে শোধরাবে? প্রতিবেশী এক ভদ্রলোক আমার মতই অবসর জীবন যাপন করছেন। একটি মাত্র মেয়ে, স্বামী-কন্যা নিয়ে দুবাই-এ থাকে। আজ সকালে ফোন করে জানিয়েছে, বর ছুটি পেয়েছে। আসছে আগামী সপ্তাহে। পুজো কাটিয়ে ফিরে যাবে। জানতে চাইছে দুবাই থেকে কিছু আনতে হবে কি না। দুবাই ভোগ্য পণ্যের স্বর্গ রাজ্য; গিন্নী ফোন হাতে স্বামীকে শুধোলেন, - ওগো, রিন্টু জানতে চাইছে কিছু লাগবে কি না। ওরা একটু পরে বাজারে বেরোবে।

ভদ্রলোক কাগজ পড়ছিলেন। চোখ না সরিয়েই বললেন, - দু বস্তা পেঁয়াজ নিয়ে আসতে বল।

নিউ জার্সি
১৭ অগাস্ট ২০১৩

No comments:

Post a Comment