ক’দিনের জন্য জার্সি সিটিতে এসেছি। ছেলের বাড়ি। ছেলের বিয়ের পর এই প্রথম এলাম ওর সংসারে। সকাল বেলা ছেলে ও বৌমা দুজনেই কাজে
বেরিয়ে যায়। আমরা বুড়ো বুড়ী একটু
হাঁটতে যাই। ফিরে এসে গিন্নী
ছেলে-বৌএর জন্য একটু রান্নাবান্না করে রাখেন। আমি টিভি দেখি। নির্বাচনের মরশুম, বেশ সময় কেটে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির মহিমায় সব ভারতীয় ইংরিজি, হিন্দি ও বাংলা চ্যানেল এখানে পাওয়া
যায় আজকাল।
আজ অফিসে পৌঁছে ছেলে ফোন করল যে এসি
মেনটেনেসের জন্য কেউ আসবে। আসার আগে ফোন করবে। ফোন এল ১১টা নাগাদ। কন্ঠস্বর শুনে মনে হল ভারতীয়। জিজ্ঞেস করলাম। হ্যাঁ যা ভেবিছিলাম, তাই। পরের প্রশ্ন , - ইন্ডিয়ার কোথায়? উত্তর শুনে তো আমি থ। ক্যালকাটা। তারপর নিজেকে শুধরে স্পষ্ট উচ্চারণে বলল, কলকাতা। ব্যাস। আত্মপরিচয় দিলাম। নাম জিজ্ঞেস করলাম। সুরজিৎ। অনেক্ষণ ফোনে কথা হল। অবশ্যই বাংলায়। অনেক বিষয় নিয়ে আড্ডা হল, ফোনেই।
ছেলেটি বিশেষ লেখাপড়া করেনি। অনেক ঘাটের জল খেয়ে এখানে এসে পৌঁছেছে। এখন মেকানিকের
কাজ করে। আমি বললাম , চলে এসো, সামনা সামনি
গল্প করা যাবে। সুরজিৎ জানাল, আধঘন্টার মধ্যেই আসছে।
আমি চানটান করে তৈরি হয়ে নিলাম। আধঘন্টা
পর দরজায় বেল। খুব আশা নিয়ে দরজা খুলে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এক বিশাল লম্বা সর্দারজী,
পরণে খাকি কাভারঅল। হাতে যন্ত্রপাতির বাক্স।
ইয়েস, - আমি জিজ্ঞেস করলাম। লোকটি
একগাল হেসে বলল, সুরজিৎ স্যার। একটু আগে কথা হল ফোনে।
আমি আরও হতভম্ব।
তুমি?
তাই? আমি তো অবাক, এত ভাল বাংলা?
আরও চওড়া হাসল সুরজিৎ। ভবানীপুরে
বাড়ি স্যার। ওখানেই জন্ম, বড় হওয়া, পড়াশোনা।
কিন্তু তোমার কথা শুনলে তো
পুরোপুরি বাঙালি মনে হয়!
সেটা স্যার আমি পঞ্জাবি বললেও
আমাকে বাঙালি মনে হয়, আমার আত্মীয় স্বজনরা তো তাই বলেন, - সলজ্জে জানাল সুরজিৎ।
জার্সি সিটি ৫ এপ্রিল ২০১৬
No comments:
Post a Comment