Thursday 18 August 2016

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও কলকাতা

প্রায় দু-দশক পরে গতকাল (১৬ই অগাস্ট ২০১৬) মহাজাতি সদনে ঢুকলাম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি আয়োজিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘বর্ষামঙ্গল’ উপলক্ষ্যে। এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে আছেন উস্তাদ সাবীর খান, উস্তাদ রজা আলী খান, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরও অনেকে। এই তিন জন হলে উপস্থিত ছিলেন।

পরিবেশিত হল একটি সুন্দর গীতি আলেখ্য, - মালহার রাগে রচিত। শিল্পীরা সব নতুন কিন্তু খুব প্রতিশ্রুতি পূর্ণ। পরিচালনায় ছিলেন পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীর পুত্রবধু মন্দিরা শর্মা লাহিড়ী। সুন্দর সরোদ বাজালেন সুনন্দ মুখোপাধ্যায়, - সেই মালহার  রাগ।

মহাজাতি সদনকে খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে। চারিদিক ঝকঝকে। নতুন কার্পেট ও চেয়ার। বেশ ভোল পালটে দেওয়া হয়েছে। টয়লেট বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আশা করি এ রকমই থাকবে ভবিষ্যতেও। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে অনেকেই বললেন এর কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের ও সরকারের শীর্ষস্থানে যিনি আছেন, তাঁর। সাংস্কৃতিক জগতে মুখ্যমন্ত্রী এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে ক্ষোভের কথা অর্দ্ধেকের বেশি হল খালি ছিল। ঝড় বৃষ্টির সন্ধ্যায় হয়তো বাড়ি থেকে বেরোননি অনেকে। উস্তাদ সাবীর আলী প্রকাশ্যেই বললেন যে এককালে এই মহাজাতি সদনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে দর্শক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিস ডাকতে হত। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের দর্শকরা কি পালটে যাচ্ছেন? তাই যদি হয় তবে তা খুব পরিতাপের কথা।

হয়তো নবীন শিল্পী বলে দর্শকদের মধ্যে তেমন সাড়া জাগেনি? এক উদ্যোক্তার এই দাবী নস্যাৎ করে উস্তাদ রজা আলী খান জানালেন যে তার পিতা উস্তাদ মনাওয়ার আলী খান এখানেই তাঁর সঙ্গীত জীবনের ‘শুরুয়াত’ করেন। দর্শকের ভীড় বাইরের ট্রাম লাইন অব্দি পৌঁছে গিয়েছিল। অবশ্য মনাওয়ার আলীর খানের কথা আলাদা। সেই ‘নবীন শিল্পীর’ বংশ পরিচয়ই যথেষ্ট ছিল।

শেষ কথাটি বললেন সাবীর আলি। করজোড়ে দর্শকদের কাছে আবেদন করলেন, - ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। একে বাঁচিয়ে রাখবেন। আপনারাই পারবেন। আমি এখনও মনে করি যে কলকাতা হল ক্লাসিকাল মিউজিকের সুপ্রীম কোর্ট।’

কলকাতা ১৭ই অগাস্ট ১৯১৬

No comments:

Post a Comment