প্রায় ৪৫/৪৬ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চাকরির খোঁজে। এক কথায় বেকার। চুচুঁড়া আমার মামাবাড়ি; আর বর্ধমানে থাকতেন আমার
কাকা। মাঝে মধ্যেই হাওড়ায় ট্রেনে
চেপে রওনা দিতাম একটু হাওয়া বদল করে আসতে।
সকালে ফেরার পথে এক দঙ্গল কলেজের ছাত্রকে দেখতাম, কোলকাতার
কলেজে পড়তে যাচ্ছে। মাঝখানের এক স্টেশন থেকে উঠতেন এক প্রবীন ভদ্রলোক, তাঁকে
ছেলেরা সাদরে নিজেদের মধ্যে ডেকে নিত আর দারুণ জমিয়ে গল্প করত। পঞ্চাশোর্ধ সেই
প্রবীন ভদ্রলোক সেই ছেলে ছোকরাদের সান্নিধ্য খুব উপভোগ করতেন বলেই মনে হত। এক
দিনের কথোপকথন স্মৃতি থেকে নীচে তুলে দিচ্ছি।
-
কি মেসোমশাই, গত সপ্তাহে দেখিনি আপনাকে, কোথায় ছিলেন?
-
ছুটি নিয়েছিলাম, মেয়ের কাছে গিয়ে ছিলাম ক’দিন
-
ও তাই? কোথায় থাকেন আপনার মেয়ে?
-
গোবরডাঙা, জামাই সেখানকার কলেজে পড়ায়
-
তা এমনিই গিয়েছিলেন না কি কোনও অনুষ্ঠান ছিল।
-
না এমনি নয়, মেয়ে নতুন বাড়ি করেছে, গৃহপ্রবেশ ছিল
-
মেয়ে বাড়ি করেছে মানে মেয়ে-জামাই মিলে, তাই তো?
-
আরে আমার জামাই সারাদিন লেখাপড়া নিয়ে থাকে, ওর অত সময়
কোথায়? যা করার আমার মেয়েই করে।
-
তাই?
-
হ্যাঁ হ্যাঁ; ওই জমি পছন্দ করা, জমি কেনা, বাড়ির নকশা
সব আমার মেয়ের কাজ
-
আপনার জামাই কিছুই করেন না?
-
না, মাটির মানুষ আমার জামাই। ওই যে বললাম, - শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকে। খুব ভাল
ছাত্র ছিল, এম এ তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। হীরের টুকরো জামাই পেয়েছি ভাই...
-
বাঃ
-
হ্যাঁ বাবা, যা করার আমার মেয়েই করে, জামাই পুরো সংসার আমার মেয়ের হাতে তুলে
দিয়েছে। সত্যিই হীরের টুকরো জামাই আমার ...
-
বা দারুণ। তা আপনার ছেলেও তো আপনার কাছাকাছি কোথায় থাকে বলেছিলেন...
-
ছেলের কথা আর বল না বাবা (ভদ্রলোককে হঠাৎ বেশ গম্ভীর দেখায়), ছেলেটা আমার
গোল্লায় গেছে...
-
কেন মেসোমশাই, ও কথা বলছেন কেন?
-
আর কি বলব, ছেলেটা খালি বৌ-এর কথায় ওঠে আর বসে!!
No comments:
Post a Comment