Thursday 1 September 2016

শপিং - আমেরিকান স্টাইল

বেশ কয়েক মাস আমেরিকায় কাটিয়ে এলাম। মেয়ে-জামাই, ছেলে-বৌ আর অবশ্যই নাতি-নাত্নীদের সাহচর্যে। যাবার আগে কিছু ডলার নিয়ে গিয়েছিলাম, - যদি কখনও দরকার হয়। দিনকাল পাল্টেছে। বিদেশী মুদ্রা এখন খুব সহজলভ্য। মনে আছে ১৯৭৭ সালে একবার লন্ডন যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে যা পেয়েছিলাম, তাতে কোনও রকমে ট্যাক্সি ভাড়াটা দেওয়া যায়। খরচ বাঁচাবার জন্য অচেনা জায়গায় টিউব রেলে হোটেলে পৌঁছেছিলাম। হোটেলের খরচাটা স্থানীয় অফিস থেকে দেওয়া হয়েছিল। ফাঁকা পকেট নিয়ে সেই আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা।

যাই হোক, এবার আমেরিকা যাত্রায় যা নিয়ে গিয়েছিলাম, পুরোটা খরচ হয়নি। ব্যাঙ্কে ফেরত দিয়েছি। যে দামে কিনেছিলাম তার থেকে কম দাম পেলাম। বিদেশী মু্দ্রার ব্যবসা এ ভাবেই চলে। নিজেদের জন্য বিশেষ কিছু কেনা হয়নি। কিই বা কিনব এই বয়সে। নাতি-নাত্নীদের আব্দার মেটাতে কিছু কেনা কাটা হয়েছে, ওদের মা-বাবাদের রক্তচক্ষু এড়িয়ে (ভীষণ আস্কারা দিচ্ছ ইত্যাদি)। এই ক্ষুদে গুলো যদি দাদু-দিদা/ঠাম্মার সঙ্গে আব্দার না করে তবে কার সঙ্গে করবে? ওদের আব্দার মেটানোটা এখন আমাদের এক বিশাল আনন্দের খোরাক।

দেশে ফেরার আগে একটা মলে গিয়ে কিছু কেনাকাটা হল। এক বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। নানা রকমের পণ্য। বাচ্চাদের ফ্রক, শার্ট, ইত্যাদি কেনা হল। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে, হঠাৎ কিছু টি-শার্টের দিকে চোখ পড়ে গেল। নানা রকম রঙের ও মাপের। আমি আবার ঈশ্বরের কৃপায় একটু বিশাল বপু। আমার মাপের পছন্দ মত জামা কাপড় পাওয়া একটু দুষ্কর। কিন্তু ঐ দেশে শুধু বিশাল কেন, বিশালতর মানুষেরও অভাব নেই। আমার মাপের বেশ নানা রঙের ও কায়দার টি-শার্ট আছে দেখলাম। পছন্দ মত নিয়েই নিলাম খান দুয়েক। বিপণি-বালিকা জানালেন “সেল” চলছে, তাই প্রায় ২৫% ছাড়। মোবাইল ফোনের ক্যালকুটারে দাম গুলো ৬৮ দিয়ে গুণ করে দেখলাম, দেশের হিসেবেও বেশ সস্তাই পড়ছে।

যথা সময়ে দেশে ফিরে সব গুছিয়ে তুললাম আলমারিতে। দিন তিনেক আগে হঠাৎ খেয়াল হল, - তাই তো ওগুলো তো পরাই হচ্ছে না। বের করলাম একটি। কিন্তু পরতে গিয়ে দেখি, বেশ কুঁচকে আছে। ভাবলাম একটু ইস্তিরিটা বুলিয়ে দিই। ইস্তিরি গরম করে শার্টটা সযত্নে মেলে দিলাম ইস্তিরি টেবিলের ওপর। গলার কছে পিঠের দিকে লেবেলটা চোখে পড়ল, - এই প্রথম।

জ্বল জ্বল করছে ছোট্ট একটি লেখা,  - “মেড ইন ইন্ডিয়া”।

কলকাতা - ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৬

No comments:

Post a Comment