Friday, 19 August 2016

হেমন্ত - অঞ্জন দত্তের নতুন ছবি

অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ছবি – হেমন্ত। শেক্সপীয়ারের হ্যামলেটের বাংলা সংস্করণ, আধুনিক যুগের পটভূমিতে। ছবিটি নিয়ে আগ্রহ ছিল খুব। অঞ্জন দত্তর ছবি আমার ভাল লাগে, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া।

পরিচিতরা বলেছিলেন ছবিটি নাকি চলছে না। এক সপ্তাহও হয়নি মুক্তি পেয়েছে কিন্তু হল ফাঁকা যাচ্ছে। এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। শেক্সপীয়ার অবলম্বনে গল্প। সফল ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। নাম ভূমিকায় পরমব্রত। বন্ধু হীরকের (হোরেশিও) ভূমিকায় যীশু। গার্গী রায়চৌধুরী হয়েছেন গায়ত্রী (রাণিমা গার্ট্রুড) আর কাকা কল্যাণের (ক্লডিয়াস) ভূমিকায় শাশ্বত।

ছবিটি দেখেই ফেললাম। ডেনমার্কের বদলে অগ্রদূত ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি হচ্ছে এই ছবির সাম্রাজ্য। তারই মালিকানা নিয়ে ক্ষমতার লড়াই। শেক্সপীয়ারের আদি গল্পে নিহত রাজার প্রেতাত্মা এসে পুত্রকে প্রতিশোধের জন্য উদ্বুদ্ধ করত। একবিংশ শতাব্দীর কলকাতায় এক অজানা ফোন নাম্বার থেকে এসএমএস আসত হেমন্তের কাছে। খোজ খবর করে দেখা গেল সেই নাম্বারের কোনও অস্তিত্বই নেই।

অভিনয়ে কোনও ত্রুটি নেই। হেমন্তর জটিল মানসিকতা ফুটিয়ে তুলতে প্রায় সফল পরমব্রত। “প্রায়’ বলছি তার কারণ শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ ও অস্থিরতা (টু বি অর নট টু বি, দেয়ার ইজ সামথিং রটন ইন দ্য স্টেট অফ ডেনমার্ক, দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ ... ইত্যাদি) ফুটিয়ে তোলা সহজ নয়। শুনেছিলাম বিলেতে শুধু শেক্সপীয়ারের নাটকের জন্য আলাদা নাট্যদল থাকে। তাদের আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরমব্রত খুব শক্তিশালী অভিনেতা তবে কিছু কিছু জায়গায় একটু অতিনাটকীয় মনে হয়েছে। যীশু অনবদ্য। শ্বাশ্বত তো যে কোনও ভূমিকায় সমান দক্ষ। গার্গীকেও সুন্দরী লাস্যময়ী রাণির ভূমিকায় সুন্দর মানিয়েছে।

ছবি শুরু হল। দর্শকের আসনে সব মিলিয়ে সাত বা আট জন। মাল্টিপ্লেক্সের প্রেক্ষাগৃহ প্রায় ফাঁকা। ছবি সুন্দর এগিয়ে চলল, আবিষ্ট হয়ে দেখলাম। বিপত্তি শুরু হল বিরামের পর। গল্প আর এগোয় না।  হঠাৎ গল্পের গতি প্রচন্ড শ্লথ হয়ে গেল, এগোতে লাগল ধাক্কা খেতে খেতে। দর্শকদের অনেকেই সজোরেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। এটাই ছবিটির দুর্বলতা। মনে হয় অঞ্জন দত্ত নিজের মন ও অনুভূতির আয়নায় হ্যামলেটের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চাইছিলেন। কিন্তু সাধারন দর্শকবৃন্দ তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। ছবিটি প্রায় পৌনে তিন ঘন্টার। বর্তমান যুগের এই দ্রুতলয়ের জীবনযাত্রার দিনে জনসাধারণের ধৈর্য ও সময়ের অভাব খুব বেশি।

বোধহয় সেখানেই মার খেয়েছে এই অনবদ্য প্রয়াস।

কলকাতা ২০ অগাস্ট ২০১৬


Thursday, 18 August 2016

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও কলকাতা

প্রায় দু-দশক পরে গতকাল (১৬ই অগাস্ট ২০১৬) মহাজাতি সদনে ঢুকলাম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি আয়োজিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘বর্ষামঙ্গল’ উপলক্ষ্যে। এই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে আছেন উস্তাদ সাবীর খান, উস্তাদ রজা আলী খান, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরও অনেকে। এই তিন জন হলে উপস্থিত ছিলেন।

পরিবেশিত হল একটি সুন্দর গীতি আলেখ্য, - মালহার রাগে রচিত। শিল্পীরা সব নতুন কিন্তু খুব প্রতিশ্রুতি পূর্ণ। পরিচালনায় ছিলেন পন্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীর পুত্রবধু মন্দিরা শর্মা লাহিড়ী। সুন্দর সরোদ বাজালেন সুনন্দ মুখোপাধ্যায়, - সেই মালহার  রাগ।

মহাজাতি সদনকে খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে। চারিদিক ঝকঝকে। নতুন কার্পেট ও চেয়ার। বেশ ভোল পালটে দেওয়া হয়েছে। টয়লেট বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আশা করি এ রকমই থাকবে ভবিষ্যতেও। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে অনেকেই বললেন এর কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের ও সরকারের শীর্ষস্থানে যিনি আছেন, তাঁর। সাংস্কৃতিক জগতে মুখ্যমন্ত্রী এখন অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে ক্ষোভের কথা অর্দ্ধেকের বেশি হল খালি ছিল। ঝড় বৃষ্টির সন্ধ্যায় হয়তো বাড়ি থেকে বেরোননি অনেকে। উস্তাদ সাবীর আলী প্রকাশ্যেই বললেন যে এককালে এই মহাজাতি সদনের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে দর্শক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিস ডাকতে হত। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের দর্শকরা কি পালটে যাচ্ছেন? তাই যদি হয় তবে তা খুব পরিতাপের কথা।

হয়তো নবীন শিল্পী বলে দর্শকদের মধ্যে তেমন সাড়া জাগেনি? এক উদ্যোক্তার এই দাবী নস্যাৎ করে উস্তাদ রজা আলী খান জানালেন যে তার পিতা উস্তাদ মনাওয়ার আলী খান এখানেই তাঁর সঙ্গীত জীবনের ‘শুরুয়াত’ করেন। দর্শকের ভীড় বাইরের ট্রাম লাইন অব্দি পৌঁছে গিয়েছিল। অবশ্য মনাওয়ার আলীর খানের কথা আলাদা। সেই ‘নবীন শিল্পীর’ বংশ পরিচয়ই যথেষ্ট ছিল।

শেষ কথাটি বললেন সাবীর আলি। করজোড়ে দর্শকদের কাছে আবেদন করলেন, - ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। একে বাঁচিয়ে রাখবেন। আপনারাই পারবেন। আমি এখনও মনে করি যে কলকাতা হল ক্লাসিকাল মিউজিকের সুপ্রীম কোর্ট।’

কলকাতা ১৭ই অগাস্ট ১৯১৬